বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তা মাহবুব সুমন তার তিন বন্ধুকে নিয়ে ২০১৮ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘শালবৃক্ষের’ যাত্রা শুরু করে। শালবৃক্ষের মূল লক্ষ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা।

মাহবুবের দু’টি প্রকল্প- ‘বনকাগজ’ এবং ‘পলকা’ (আলু থেকে প্লাস্টিক), ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। ইউএনবি’র সাথে এক আলাপচারিতায় মাহবুব তার কাজ নিয়ে তুলে ধরেছেন।

মাহবুবের কাছে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশ বান্ধব কাজের উৎসাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, পুনর্ব্যবহার এনার্জি নিয়ে কিছু গবেষণা করে এই তরুণ বুঝতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের বড় একটি সমস্যা। তাই খুব দ্রুতই মাহবুব পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করা শুরু করেন।

তিনি বলেন, প্রথমেই আমি বনকাগজ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। যেহেতু গাছ থেকে কাগজ তৈরি করা হয়, তাই আমার চেষ্টা ছিল কাগজ থেকেই আবার গাছ বৃদ্ধি করার।

অপরদিকে পলকা প্রকল্পের মাধ্যমে আলু থেকে প্লাস্টিক তৈরির মাধ্যমে পলিথিন ব্যবহারের বন্ধ করা সম্ভব।

আরও পড়ুন: স্টার্টআপ শুরুর চাপ: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থায়ন

এছাড়াও তিনি অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান।

বনকাগজ কী?

বনকাগজ হলো হাতে তৈরি করা অন্যান্য সব কাগজের মতোই কাগজ। তবে এর বিশেষত্ব হলো এটি ব্যবহারের পর মাটিতে বা টবে পুতে দিলে এর থেকে খুব সহজেই গাছের জন্ম হবে।

বিশ্বব্যাপী গাছ কেটেই কাগজ তৈরি হয়, আর ব্যবহৃত কাগজ থেকে দূষণের তৈরি হয়। ব্যবহৃত কাগজকে পরিবেশের কাজে লাগাতেই এই উদ্যোগ।

বনকাগজ উদ্ভাবনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব জানান, এটি কোনও নতুন উদ্ভাবন নয়। বরং বেশ আগে থেকেই এই ধারণার প্রচলন আছে।

বনকাগজের মতো পরিবেশবান্ধব কাগজের প্রথম প্রচলন শুরু হয় আমেরিকাতে ১৯৪১ সালে। ২০১৬ সালে জাপানের দৈনিক মাইনিচি শিমবুনসা পত্রিকা এই কাগজ ব্যবহার শুরু করে।

মাহবুব বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সাল থেকে এই কাগজ তৈরির চেষ্টা করে ২০১৯ সাল নাগাদ সফলতা লাভ করি। বর্তমনে খুব অল্প পরিসরে তৈরি হলেও, ভবিষ্যতে আরও অধিক পরিমাণে বনকাগজ তৈরি করা হবে। এত করে এই কাগজের দামও কমে আসবে।’

তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, এখনও তেমন চাহিদা তৈরি হয়নি এই কাগজের।

পলকা কী?

পলকা হল প্লাস্টিক পলিথিন ব্যাগের বিকল্প এক ধরনের জৈব-প্লাস্টিক ব্যাগ, যা আলু থেকে তৈরি হয়। এই ব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং পঁচনশীল।

পলকা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহবুব জানান, মুন্সিগঞ্জের আলুর গুদাম ঘুরে দেখতে যেয়ে দেখেন, প্রচুর আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ফেলে দিতে হচ্ছে। এত গুদামগুলোর বেশ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি এক জার্মান বন্ধুর সহযোগিতায় আলু থেকে এই পরিবেশে বান্ধব ব্যাগ পলকা তৈরি করি। প্রথম দিকে অনেক ভুল করার পর, অবশেষে এই বানাতে সফল হই।’

বাংলাদেশ ২০০২ সালে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।যদিও এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত তেমন একটা সফলতা পাওয়া যায়নি।

পরিবশে অধিদপ্তরের মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার টনের মতো প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এসকল বর্জ্য পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ব্যাপক ক্ষতিকর।

মাহবুব জানান, করোনার কারণে এবং আর্থিক সমস্যার কারণে পলকার উৎপাদন কমে গেছে। তবে ২০২৩ সাল থেকে আরও বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন শুরু করার আশাব্যক্ত করেন।

প্রতিকূলতা

নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশ বান্ধব বিকল্প পণ্য নিয়ে কাজ করার বর্তমানে বেশ প্রতিকূলতা রয়েছে তরুণ উদ্যেক্তা মাহবুব। তার মতে, এসকল ধারণা নতুন বিধায় মানুষকে বুঝাতে এবং এসকল বিষয়ের সাথে পরিচিত করে তুলতে সময় লাগছে।

এছাড়াও আর্থিক সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন বলেও মনে করেন মাহবুব। তার মতে, বাজারে পরিবেশ বান্ধব পণ্য পৌঁছে দিতে হলে সরকারকে সঠিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।